Home / অণুগল্প / খবরহীন – যশোবন্ত্ বসু

খবরহীন – যশোবন্ত্ বসু

সবকিছুরই একটা শেষ আছে। মনোতোষেরও অবাক হওয়ার পালা শেষ হল। ওয়ান ফাইন মর্নিং মনোতোষ হঠাৎ আবিষ্কার করল, সে আর অবাক হচ্ছে না।

ব্যাপারটা নির্জলা সত্যি।
সংসার, সমাজ,দেশ সর্বত্র ঘটে-চলা নানাবিধ অভূতপূর্ব, অকল্পনীয়, অত্যাশ্চর্য ঘটনারাজি অথবা মনুষ্যকৃত নিদারুণ ভয়ঙ্কর, পৈশাচিক, নারকীয় কীর্তিকলাপ তার মনে আর বিন্দুমাত্র রেখাপাত করছে না। এক অদ্ভুত নিরেট ভাবলেশহীন অবস্থা সমস্ত মন ও অনুভূতিকে অস্বাভাবিক রকমের স্বাভাবিক আর হেলদোলহীন রেখেছে।

এখন মানুষ যেহেতু সমাজ এবং সমাজমাধ্যমবদ্ধ জীব, যেকোনও অস্বাভাবিক ঘটনায় সে তার প্রতিক্রিয়া কোনও না কোনও ভাবে ব্যক্ত করবেই। মনে ও ফোনে সেই নিয়ে চর্চা, উত্তেজনা, মন্তব্য, প্রতিবাদ, এমনকী তুলকালাম পর্যন্ত করবে। তারপর মোমবাতি নিয়ে মিছিল করে দায় ঝেড়ে ফেলে আবার অন্য প্রমোদে ঢেলে দেবে মন।

তো এই যে হঠাৎ মনোতোষ টের পেল, সে আর কোনও কিছুতেই অবাক হতে পারছে না, এর পেছনে একটা ছোট্ট ইতিহাস আছে।

দিনদুয়েক আগের এক রাত্রে তার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের বন্ধুরা তাদের নিজেদের অ্যাকাউন্টে শোভিত ছবি কালো করে দিয়ে মনোতোষকেও অনুরোধ করেছিল, তার ডিপি কালো করে দিয়ে এক বীভৎস নারকীয় মর্মান্তিক অমানবিক ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে। মনোতোষ সেই অনুরোধে গুরুত্বই দেয়নি। ঠিক দু’দিন পরে সকালে ঘুম ভেঙে সে দেখে, সেই গ্রুপের অ্যাডমিন অখিলেশ তাকে লিখেছে, ছি: মনোতোষ ছি: ! তুমি কি মানুষ ? আমরা সবাই এত অনুরোধ করা সত্ত্বেও তুমি তোমার ছবি কালো করলে না ? আমরা সবাই অবাক !

আরও অদ্ভুত ব্যাপারটা এই যে, বন্ধুরা সকলে বেজায় অবাক হয়ে গেলেও মনোতোষ নিজে মোটেই অবাক হল না। সে প্রথমে হো হো করে খানিক হাসল। তারপর একটু তলিয়ে দেখতে গিয়ে বুঝতে পারল, শুধু সেই মুহূর্তেই নয়, গত কয়েক মাস ধরেই নানা চমকপ্রদ বা অমানুষিক নির্মম ঘটনাপ্রবাহে সে আর মোটেই অবাক হচ্ছে না। শিউরেও উঠছে না।

সহকর্মী সঞ্জয় পরামর্শ দিয়েছিল, একবার সাইকিয়াট্রিস্ট ডাক্তার গজপতি কোনারের সঙ্গে কনসাল্ট করতে। মনোতোষ তাতে পাত্তা না দিয়ে বলেছিল, মন্দ কী ? এইতো দিব্যি আছি !

তবু নাছোড়বান্দা সঞ্জয় প্রায় জোর করেই মনোতোষকে ডাক্তার কোনারের কাছে নিয়ে যায়। তিনি চার-পাঁচটা সিটিং দেন। শেষে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছোন, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে হলে মনোতোষকে খবর শোনা, খবরের কাগজ পড়া একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে।

মনোতোষ সেই পরামর্শ অক্ষরে-অক্ষরে মেনে চলছে, এমনকি সে স্মার্টফোন ব্যবহার করাও ছেড়ে দিয়েছে ।

Leave a comment

Check Also

আত্মারামের বাসর যাপন

আত্মারামের বাসর যাপন – রঘুনাথ মণ্ডল

    আত্মারামের বিয়ে, কনে বিল্ববাসিনী। আগে আত্মারাম কনে দেখেনি। বাবা, মামা সম্বন্ধ করে ঠিক …

সেই সব শীতকাতুরেরা

সেই সব শীতকাতুরেরা – সোমক সেনগুপ্ত

[ সে এক সময় ছিল বটে! ভিনগ্রহী জীব তবু হয়তো কল্পনা করা যেত- কিন্তু মোবাইল …

একুশে ফেব্রুয়ারি

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো : একটি গান ও দুই বাংলার মিলনসেতু – বদরুদ্দোজা হারুন

[ভাষা শহীদ আবুল বরকতের ৯৬ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে লেখা l]   “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো …

মৃত্যুর কবিতারা- সুদীপ্ত বিশ্বাস

১ লাশ কাটা ঘর – সুদীপ্ত বিশ্বাস একদিন আমার বদলে বিছানায় শুয়ে থাকবে আমার লাশ। …